মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নেটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করা রুশ
যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছিলেন দিনকয়েক
আগে।
রুশ আকাশসীমায় এয়ারক্রাফট ভূপাতিত করার চেষ্টার বিরুদ্ধে
হুঁশিয়ারি দিয়ে রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভ পশ্চিমা
দেশগুলোকে বলেছেন, মস্কোর বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসন ‘ভয়াবহ পাল্টা জবাবের’
মুখোমুখি হবে।
জাতিসংঘে সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে শনিবার
তিনি জার্মানির বিরুদ্ধে উত্তেজক সামরিক কথাবার্তা বলারও অভিযোগ এনেছেন বলে
জানিয়েছে বার্তা সংস্থা রয়টার্স।
এস্তোনিয়ার আকাশে মস্কোর তিনটি
যুদ্ধবিমান পাঠানোর অভিযোগ এবং নেটোর যুদ্ধবিমান পোল্যান্ডের ওপর রুশ ড্রোন
ভূপাতিত করায় ইউক্রেইনে যুদ্ধ চলার মধ্যেই সাম্প্রতিক সময়ে মার্কিন
নেতৃত্বাধীন জোট নেটোর পূর্বাঞ্চলীয় অক্ষে উত্তেজনা ক্রমশ বাড়তে দেখা
যাচ্ছে।
ল্যাভরভ বলেছেন, আমার দেশের বিরুদ্ধে যে কোনো আগ্রাসনের
পাল্টা প্রতিক্রিয়া হবে ভয়াবহ। নেটো ও ইইউর (ইউরোপীয় ইউনিয়ন) যারা তাদের
ভোটারদের বলছে যে রাশিয়ার সঙ্গে যুদ্ধ অনিবার্য, তাদের এ বিষয়ে কোনো
সন্দেহ থাকা উচিত নয়।
কয়েকদিন আগে মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড
ট্রাম্প নেটোর আকাশসীমা লঙ্ঘন করা রুশ যুদ্ধবিমানকে গুলি করে ভূপাতিত করার
পরিকল্পনায় সমর্থন জানিয়েছিলেন। এর আগে তিনি ইউক্রেইনে রুশ সেনাদের সক্ষমতা
নিয়ে কটাক্ষ করেছিলেন এবং রাশিয়াকে ‘কাগুজে বাঘ’ আখ্যা দিয়েছিলেন।
সাধারণ
পরিষদের অধিবেশনে ভাষণের পর এক সংবাদ সম্মেলনে ল্যাভরভকে ট্রাম্পের
সাম্প্রতিক এসব মন্তব্য উপেক্ষা করতে দেখা যায়। তবে রাশিয়ার ভেতরে হামলার
ব্যপারে তিনি কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেন।
তিনি বলেছেন, ‘আমাদের
আকাশসীমায় কোনো উড়ন্ত বস্তু, বা কোনো বস্তু ভূপাতিত করার চেষ্টা করা হলে,
যারা আমাদের ভূখণ্ডের অখণ্ডতা ও সার্বভৌমত্ব লঙ্ঘন করার মতো জঘন্য পদক্ষেপ
নেবে, তারা ভয়াবহভাবে পস্তাবে।
সাধারণ পরিষদের অধিবেশনে দেয়া ভাষণে
রুশ এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, রাশিয়া কখনোই নেটো বা ইইউ দেশগুলোকে লক্ষ্য
করে ড্রোন বা ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেনি, ভবিষ্যতেও এমন কিছু করার
পরিকল্পনা নেই তাদের।
২০২২ সালের ফেব্রুয়ারিতে রাশিয়া ‘বিশেষ সামরিক
অভিযান’ শুরু করার পর মস্কো যেসব এলাকার নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে, সেসব এলাকা ফের
একদিন ইউক্রেইনের সঙ্গে একত্রিত হবে, কেবল ‘রাজনৈতিকভাবে অন্ধরাই’ এমনটা
প্রত্যাশা করতে পারে বলে তিনি মন্তব্যও করেন।
ট্রাম্প কিছুদিন আগে
বলেছিলেন, কিইভ চাইলে রাশিয়ার নিয়ন্ত্রণে থাকা সব ভূখণ্ড পুনর্দখল করতে
পারে। ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্রের নাম না নিয়েই ল্যাভরভ এর উত্তর দিলেন বলে
অনেকে মনে করছেন।
রাশিয়া ট্রাম্পের অধীনে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ‘খোলামেলা আলোচনা’ চালিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে আশাবাদী বলেও তিনি জানান।
একে
অপরের ভূখণ্ডে দূতাবাসের কার্যক্রম বাড়ানোর লক্ষ্যে আসছে মাসগুলোতে মস্কো ও
ওয়াশিংটনের মধ্যে তৃতীয় রাউন্ডের বৈঠক হতে যাচ্ছে, বলেছেন ল্যাভরভ।
পাল্টাপাল্টি কূটনৈতিক প্রত্যাহার এবং নানান বিধিনিষেধে গত এক দশকে দুই
দেশের সম্পর্ক অনেকটাই তলানিতে পৌঁছে গিয়েছিল।
ল্যাভরভ বুধবার জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের বার্ষিক অধিবেশনের সাইডলাইনে মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিওর সঙ্গে বৈঠকও করেছেন।
রুশ
এ পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, রাশিয়া-ভারতের অর্থনৈতিক সম্পর্ক ঝুঁকির মুখে
আছে বলে তিনি মনে করেন না। চীন ও ভারত যেন রুশ তেল কেনা বন্ধ করে সেজন্য
বেইজিং ও নয়া দিল্লির পণ্যে ট্রাম্প শুল্ক আরোপ করলেও এশিয়ার এই দুই দেশের
কেউই এখন পর্যন্ত ওয়াশিংটনের হুমকিতে দমেনি।
ল্যাভরভ ভেনেজুয়েলার আশপাশে আন্তর্জাতিক জলসীমায় যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক উপস্থিতি জোরদারে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
হাইতির
গ্যাংগুলোর বিরুদ্ধে লড়তে বড় আন্তর্জাতিক বাহিনী সৃষ্টিতে জাতিসংঘের
নিরাপত্তা পরিষদে ‘কিছু সৃজনশীল নটের’ আনা খসড়া প্রস্তাব ভেনেজুয়েলায়
হামলার ন্যায্যতা দেয়ার জন্য আনা হয়েছে কিনা তা নিয়েও তিনি সন্দেহ প্রকাশ
করেছেন।
যুক্তরাষ্ট্র ও পানামা সম্প্রতি এ সংক্রান্ত একটি খসড়া
প্রস্তাব জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদে তুলেছে। তবে প্রস্তাবটি পাস হতে হলে ১৫
সদস্যের অন্তত ৯টির সমর্থন লাগবে, পাশাপাশি রাশিয়া, চীন, যুক্তরাষ্ট্র,
ফ্রান্স বা যুক্তরাজ্য কেউ ভিটো দিতে পারবে না। ‘কিছু সৃজনশীল নট নিরাপত্তা
পরিষদ থেকে অনুমোদন নিতে পারে এবং পরে বলতে পারে যে হাইতির গ্যাংগুলো
ভেনেজুয়েলায় আশ্রয় নিয়েছে- এমনটা উড়িয়ে দিতে পারছি না আমি, বলেন ল্যাভরভ।