বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ সীমান্তে আবারও মায়ানমারের ভেতর থেকে তীব্র গোলাগুলির শব্দ শোনা গেছে। এতে সীমান্তবর্তী এলাকায় ব্যাপক আতঙ্ক সৃষ্টি হয়েছে।বৃহস্পতিবার (৯ অক্টোবর) রাত সাড়ে ১১টা থেকে প্রায় এক ঘণ্টা ধরে আরাকান আর্মি (এএ) ও আরসার মধ্যে তীব্র সংঘর্ষ হয়।
স্থানীয় সূত্রে জানা যায়, নাইক্ষ্যংছড়ির ঘুমধুম ইউনিয়ন ও উখিয়ার থাইংখালী, ধামনখালী এবং রহমতের বিল জিরোপয়েন্টসহ টেকনাফের হোয়াইক্যং সীমান্ত এলাকার মানুষজন রাতভর গোলাগুলির শব্দ শুনে আতঙ্কে সময় কাটান। মায়ানমারের রাখাইন রাজ্যে সংঘর্ষ হলেও সীমান্তসংলগ্ন এলাকায় বসবাস করায় বাংলাদেশ অংশেও গোলাগুলির শব্দ স্পষ্ট শোনা যায়। নারী-পুরুষ ও শিশুরা ভয়ে ঘর থেকে বের হয়নি।
বিজিবি উখিয়া ৬৪ ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল জসীম উদ্দিন বলেন, ‘মায়ানমারের ভেতরে বিভিন্ন সশস্ত্র গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ বহুদিন ধরেই চলছে। সীমান্তে যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় বিজিবি সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে। স্থানীয়দের আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।’
টেকনাফ ব্যাটালিয়নের (২ বিজিবি) অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আশিকুর রহমান বলেন, ‘মায়ানমারের ভেতরে সশস্ত্র গোষ্ঠীগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ চলছে, যা সম্পূর্ণভাবে দেশটির অভ্যন্তরীণ বিষয়। সীমান্তে বিজিবি সতর্ক অবস্থানে রয়েছে, নিয়মিত টহল জোরদার করা হয়েছে এবং যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সর্বদা প্রস্তুত রয়েছে।’
বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের পূর্ব জোনের মিডিয়া কর্মকর্তা জানান, নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে কোস্টগার্ড সদস্যরা নিয়মিত টহল জোরদার রেখেছেন। যেকোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় কোস্টগার্ড প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে, বাংলাদেশ ও মায়ানমারের সীমান্তবর্তী ৬৬ কিলোমিটার দীর্ঘ নাফ নদীতে বাংলাদেশ কোস্টগার্ডের টহল জোরদার করা হয়েছে। পাশাপাশি নাফ নদী ও সীমান্ত এলাকায় উখিয়া ৬৪ এবং টেকনাফ ২ বর্ডার গার্ড ব্যাটালিয়নের সদস্যরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২৩ সালের অক্টোবরে মায়ানমারে জান্তা সরকারের বিরুদ্ধে সশস্ত্র প্রতিরোধ শুরু হয়। এর ধারাবাহিকতায় ২০২৪ সালের ৮ ডিসেম্বর আরাকান আর্মি দাবি করে, তারা রাখাইন রাজ্যের একটি বড় অংশসহ বাংলাদেশ সীমান্তবর্তী মায়ানমারের মংডু শহর ও প্রায় ২৭১ কিলোমিটার এলাকায় নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
এর পর থেকে রাখাইন রাজ্যে আরাকান আর্মি ও আরসাসহ বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে সংঘর্ষ তীব্র আকার ধারণ করেছে, যার প্রভাব বাংলাদেশ সীমান্তেও পড়ছে।