আজকের তারিখঃ | বঙ্গাব্দ
শিরোনাম :
বাউফলের পশ্চিম নওমালা নেছারিয়া ফাজিল মাদ্রাসার প্রভাষকের দুর্নীতি ও অনিয়ম আইন উপদেষ্টা হিসেবে যোগ দিলেন এ্যাড.মানিক লাল আচার্য্য বরিশালের বাজারে ঊর্ধ্বমুখী মাছের দাম বরিশালে টেইলার্সের কারখানা থেকে শ্রমিকের লাশ উদ্ধার কতটা কার্যকর হবে মানবাধিকার কমিশন খসড়া অধ্যাদেশ ২০২৫ নেপালে অভ্যুত্থান-পরবর্তী নির্বাচনী হাওয়া উন্নয়নের রোল মডেল ভিয়েতনাম আপনি চাকরি করবেন নাকি চাকরি দিবেন সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম: আপনি ছিলেন থাকবেন অনুসন্ধানী প্রতিবেদন লেখার ৭টি কাঠামো অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা: সম্পাদনা: অনুসন্ধানী প্রতিবেদন যেভাবে ভেঙে যায় সালমান-ঐশ্বর্যর প্রেম থাইল্যান্ডের ম্যাসাজ আসলেই আলাদা : প্রিয়ন্তী উর্বী ডিজিটাল সহিংসতার শিকার ২৯ অভিনেত্রী নববধূর সাজে নজর কাড়লেন সেলেনা গোমেজ সাহস তো দ্যাহাইছি, এবার দুঃসাহস দেহাতি আইছি শবনম ফারিয়ার আসল রূপ, দেশে থাকলে শুধু ভণ্ডামি করে আপনারা হয়তো আমার ফ্যামিলি সম্পর্কে জানেন না আমি আরও ৯৮ বাচ্চার মা হতে চাই : পরীমণি অর্চিতা স্পর্শিয়া রোগে আক্রান্ত, চাইলেন দোয়া

চট্টগ্রাম কাস্টমসে ‘প্যাকেজ ঘুষে’ কন্টেইনার খালাসের অভিযোগ!

রিপোর্টারের নাম: বরিশাল খবর
  • সংবাদ প্রকাশের তারিখ : Oct 9, 2025 ইং
  • ৭৮১ বার
ছবির ক্যাপশন:

বন্ড সুবিধার নামে কোটি কোটি টাকার রাজস্ব ফাঁকি, ভুয়া কাগজপত্রে আমদানি,কাস্টমস  কর্মকর্তাদের সঙ্গে আঁতাত এবং ‘প্যাকেজ ঘুষে’ কন্টেইনার খালাসের   অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রাম কাস্টমসের সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে ।

সূত্রমতে, জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেড নামের একটি  এক্সেসরিজ প্রতিষ্ঠান বছরের পর বছর বন্ড সুবিধা অপব্যবহার করে কোটি কোটি টাকার পলিস্টার ফেব্রিক্স (বোরকার কাপড়) ও পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার খোলাবাজারে বিক্রি করছে। অথচ এসব পণ্য এক্সেসরিজ খাতের কোনো কাঁচামালই নয়, এবং প্রতিষ্ঠানের নেই কোনো উৎপাদন সুবিধা বা মেশিনারিজ। তবুও ঘুষের বিনিময়ে ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট থেকে নিয়মিত প্রাপ্যতা অনুমোদন পাচ্ছে তারা।

এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, ঢাকা উত্তর বন্ড কমিশনারেট জংশিন টেক্সটাইলকে চলতি বছরের ২৩ মে ২৫০ মেট্রিক টন পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার এর প্রাপ্যতা দিয়েছে। তবে এই প্রাপ্যতা দেওয়ার আগে প্রতিষ্ঠানে এই কাঁচামাল দিয়ে পণ্য তৈরির মেশিনারিজ রয়েছে কিনা, প্রতিষ্ঠান এই পণ্য রপ্তানি করে কিনা-তার কিছুই যাচাই করা হয়নি। প্রায় ১০ লাখ টাকায় ‘প্যাকেজ ঘুসে’ এই প্রাপ্যতা দেওয়া হয়েছে । চলতি বছরের ১৭ মার্চ এই প্রতিষ্ঠানকে ৫২৮ দশমিক ৬৩ মেট্রিক টন প্রাপ্যতা দেওয়া হয়েছে। যার মধ্যে পলিস্টার ফ্রেবিক্সস কেবল ৩৯১ দশমিক ৩১ মেট্রিক টন। এই প্রাপ্যতা অনুমোদনে প্রায় ২০ লাখ টাকা ঘুস নেয়া হয়েছে। তবে প্রতিষ্ঠান পলিস্টার ফ্রেবিক্সস ছাড়া আর কোনো পণ্য আমদানি করেনি বলে জানা গেছে। এই দুইটি প্রাপ্যতায় সই করেছে সহকারী কমিশনার মো. মালেকীন নাসির আকন্দ।

জানা গেছে, পলিস্টার ফ্রেবিক্সস বা বোরকার কাপড় এবং পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার এক্সেসরিজ বন্ডের প্রতিষ্ঠানের পণ্য নয়, এটি এক্সেসরিজ খাতে ব্যবহৃত হয় না। জংশিন টেক্সটাইল (বিডি) লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডেনিয়েল (জিয়াও হুযাসং) বন্ড কর্মকর্তার যোগসাজসে বন্ড বর্হিভূত পণ্য বন্ড থেকে টাকার বিনিময়ে ইউপি ও প্রাপ্যতা নেয়। পরে সিঅ্যান্ডএফ এর দালাল ওবায়দুর রহমান এবং এ কে এম রেজাউর রহমান বিভিন্ন সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট, কাস্টমস গোয়েন্দা, চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা ঘুসের কন্ট্রাক করে পণ্য খালাস করে আসছে। এই পণ্য সরাসরি ইসলামপুরে খোলাবাজারে চলে যায়। আর ডেনিয়েল প্রতি এলসিতে ১৫ থেকে ২০ লাখ টাকা পায়।

জানা গেছে, জংশিন টেক্সটাইল চলতি বছরের জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে চীন থেকে বন্ড সুবিধায় চট্টগ্রাম বন্দরে এক কন্টেইনার পণ্য আমদানি করে। ১৬ জুলাই ফরমোশা লজিস্টিকস লিমিটেড নামে সিঅ্যান্ডএফ এজেন্টের মাধ্যমে পণ্য খালাসে অ্যাসাইকুডায় বিল অব এন্ট্রি দাখিল করে নাম্বার সি-১৩৪০৮৩৬, ২১ হাজার ৯৯৯ কেজি পলিস্টার ফ্রেবিক্সস ঘোষণা দেওয়া হয়। কিন্তু মূলত কন্টেইনারে ছিলো বোরকার কাপড়। আর ওজন হলো ২৮ হাজার কেজি। অর্থাৎ মিথ্যা এইচএস কোড ও ঘোষণার অতিরিক্ত ৬ হাজার কেজি বা ৬ টন কাপড় কন্টেইনারে বেশি রয়েছে। এই চালানের এলসি জংশিন করলেও টাকা দিয়েছে ইসলামপুরের একজন অবৈধ বন্ডের কাপড় বিক্রেতা। জংশিন এই এলসিতে প্রায় ২০ লাখ টাকা পেয়েছে। জংশিন ও সিঅ্যান্ডএফ এর দালাল হিসেবে পরিচিত ওবায়দুর রহমান এবং এ কে এম রেজাউর রহমান চালানটি খালাসের দায়িত্ব নেয়। তিনি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কর্মকর্তাদের মোটা অংকের টাকা দিয়ে দ্রুত অ্যাসেসমেন্ট শেষ করে ওইদিন পণ্য খালাসের চেষ্টা করেন। তবে চালানটিতে মিথ্যা এইচএস কোড ও ঘোষণার অতিরিক্ত ৬ টন কাপড় রয়েছে বলে প্রথমে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দার চট্টগ্রাম আঞ্চলিক কার্যালয়কে একজন তথ্য দেয়। এরই প্রেক্ষিতে চালানটি অ্যাসাইকুডা থেকে লক ও খালাস স্থগিত করে।

চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস প্রতিবেদন পাওয়ার পর পণ্য খালাসের উদ্যোগ নেয়। কাপড় কন্টেইনার থেকে তিনটি কর্ভাড ভ্যানে দ্রুত তোলা হয়। এরই মধ্যে এনবিআরসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে খবর পেয়ে মধ্য রাতে খালাস পর্যায়ে এআইআর তিনটি কর্ভাড ভ্যান এনসিটি ইয়ার্ড থেকে আটক করে এবং সিল করে বন্দরের নিরাপত্তা হেফাজতে রাখা হয়। এরই মধ্যে ফুল মিয়া আবার তৎপর হয়ে উঠে। কাস্টমস গোয়েন্দা থেকে চিঠি ম্যানেজ করে কাস্টম হাউসকে দেওয়া হয়। বলা হয়, ফুল মিয়া আবার খালাস পর্যায়ে যাচাই করবেন। এআইআর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তাকে ফুল মিয়ার মাধ্যমে ১০ লক্ষ টাকা ঘুষ দেয়া হয়।সব ম্যানেজ শেষে ফুল মিয়া ও এআইএর এর সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা বন্দরের স্কেলে তিনটি কর্ভাড ভ্যানের (খালি কর্ভাড ভ্যানের ওজন না নিয়ে পন্য ওজন করা হয় যাতে অতিরিক্ত ৬ টন পন্য গোপন করা যায় ) প্রতি খালি গাড়ির ওজন ২ টন করে বেশি দেখিয়ে চালানটি খালাস করে দেন।

অন্যদিকে, জংশিন এর প্রতিটি চালান খালাসের সঙ্গে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দার একজন যুগ্ম পরিচালক (সম্প্রতি কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দা থেকে একটি ভ্যাট কমিশনারেটে যুগ্ম কমিশনার হিসেবে বদলি হয়েছে) জড়িত। তিনি প্রতিটি চালান থেকে মোটা অংকের ঘুস নিতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কাস্টমস গোয়েন্দা চালানটি লক করার পর এই কর্মকর্তা বিচলিত হয়ে উঠেন। পরে কাস্টমস গোয়েন্দার চট্টগ্রামের একজন উপ পরিচালককে (উপ কমিশনার) তিনি দ্রুত চালানটি খালাস করতে বলেন। চালানটি কায়িক পরীক্ষা করতে দায়িত্ব দেওয়া হয় সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফুল মিয়াকে। মূলত সেই যুগ্ম পরিচালক ফুল মিয়াকে ‘চালানে এইচএস কোডে ঝামেলা নেই, অতিরিক্ত কাপড় নেই’-এমন রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দেন। আর কাস্টম হাউসের এআইআর শাখা, কাস্টম হাউসের অ্যাসেসমেন্ট শাখার কর্মকর্তাসহ সবাইকে ম্যানেজ করতে ‘ফুল মিয়াকে’ ১০ লাখ টাকা দিতে বলেন। ইসলামপুরের ওই ব্যবসায়ী ফুল মিয়াকে টাকা দেন। ফুল মিয়া কায়িক পরীক্ষা করে ২৭ জুলাই চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসকে রিপোর্ট দেন, যাতে উল্লেখ করা হয় এইচএস কোড এবং ঘোষিত ওজন সঠিক রয়েছে। তবে কায়িক পরীক্ষার সময় উপস্থিত একাধিক শ্রমিক নিশ্চিত করেছেন যে সাড়ে ৫ থেকে ৬ টন পণ্য বেশি পাওয়া গেছে।

চলতি বছরের মাত্র তিন মাসে জংশিন টেক্সটাইল আমদানি করেছে ৯টি কন্টেইনারে প্রায় ২০৭ টন পলিস্টার ফেব্রিক্স। ঘোষণায় দেখানো হয়েছে এক ধরনের ফেব্রিক্স, কিন্তু বাস্তবে এসেছে বোরকার কাপড়। এই কাপড় সরাসরি রাজধানীর ইসলামপুরের পাইকারি বাজারে চলে গেছে। এর মাধ্যমে প্রায় ১৬ কোটি ৩৭ লাখ টাকার পণ্য আমদানি করে শুল্ক ফাঁকি দেওয়া হয়েছে অন্তত ১১ কোটি ২৫ লাখ টাকা। শুধু তাই নয়, এই তিন মাসের মধ্যে একাধিকবার ঘোষণার অতিরিক্ত পণ্য আমদানি করেছে প্রতিষ্ঠানটি। যেমন ১৬ জুলাই দাখিল করা বিল অব এন্ট্রির (সি-১৩৪০৮৩৬) মাধ্যমে ঘোষণায় ২১ হাজার ৯৯৯ কেজি কাপড় দেখানো হলেও কন্টেইনারে পাওয়া গেছে ২৮ হাজার কেজি—অর্থাৎ ৬ টনের বেশি কাপড় অতিরিক্ত।

এই চালান আটক করতে গিয়ে কাস্টমস শুল্ক গোয়েন্দার একটি আঞ্চলিক ইউনিট প্রথমে লক দিলেও, পরবর্তীতে ঘুষের লেনদেনে সবকিছু ম্যানেজ হয়ে যায়। কায়িক পরীক্ষার দায়িত্বে থাকা সহকারী রাজস্ব কর্মকর্তা ফুল মিয়া ভুয়া প্রতিবেদন দিয়ে চালানটি খালাস করে দেন। শ্রমিকদের সাক্ষ্যে প্রমাণ মেলে যে অন্তত ৫-৬ টন কাপড় অতিরিক্ত ছিল। তবুও ফুল মিয়া ঘুষের বিনিময়ে রিপোর্টে সবকিছু সঠিক দেখান। শুধু এই চালানই নয়, এর পরপরই আরও অন্তত তিনটি চালান একইভাবে খালাস হয়ে যায়। ঘুষ বন্টনের মূল দায়িত্ব পালন করেন ফুল মিয়া নিজেই।

বন্ড কমিশনারেট থেকেও ঘুষ বাণিজ্যের প্রমাণ মিলেছে। ২০২৫ সালের ২৩ মে জংশিন টেক্সটাইলকে ২৫০ টন পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারের প্রাপ্যতা অনুমোদন দেওয়া হয়, যার আগে কোনো যাচাই করা হয়নি প্রতিষ্ঠানটির উৎপাদন ক্ষমতা বা রপ্তানি কার্যক্রমের। একটি সূত্র নিশ্চিত করেছে, প্রায় ১০ লাখ টাকার ঘুষে এই অনুমোদন নেওয়া হয়েছে। এর আগে ১৭ মার্চ আরও ৫২৮ টনের প্রাপ্যতা দেওয়া হয়, যেখানে শুধু পলিস্টার ফেব্রিক্সই ছিল ৩৯১ টন। এই অনুমোদনের জন্য প্রায় ২০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়া হয়েছিল। অনুমোদনপত্রে সই করেছিলেন সহকারী কমিশনার মো. মালেকীন নাসির আকন্দ।

অভিযোগ রয়েছে, প্রতিষ্ঠানটি কখনো প্রকৃতপক্ষে কোনো পণ্য রপ্তানি করেনি। কাগজপত্রে দেখানো হয় ব্রা কাপ, ফেব্রিক্স কাপ, ফোম লেমিনেশন, লেবেল ইত্যাদি রপ্তানি হচ্ছে। বাস্তবে রপ্তানি হয় না, বরং স্থানীয় গার্মেন্টস থেকে এলসি কিনে কাগজপত্রে ভুয়া রপ্তানি দেখানো হয়। পলিস্টার ফেব্রিক্স ঢুকে যায় ইসলামপুরে আর পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার চলে যায় ডেমরার কোনাপাড়া ও ফকিরাপুলে। প্রতি কন্টেইনারে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় মালিক ডেনিয়েল ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ২০১৯ সাল থেকেই একইভাবে বন্ড সুবিধা অপব্যবহার করে আসছে প্রতিষ্ঠানটি। প্রতিবছর তারা অন্তত ১৫-১৮ কন্টেইনার পলিস্টার ফেব্রিক্স এবং ৮-১০ কন্টেইনার পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানার আমদানি করছে। এইভাবে বছরে প্রায় ২০-২১ কোটি টাকা শুল্ক ফাঁকি হচ্ছে শুধু বোরকার কাপড় থেকে, আর পিভিসি ফ্লেক্স ব্যানারে ফাঁকি হচ্ছে আরও অন্তত পাঁচ কোটি টাকা।


কমেন্ট বক্স

নিউজটি শেয়ার করুন..

এ জাতীয় আরো খবর..

সম্পাদক ও সিইও: মামুনুর রশীদ নোমানী

বরিশাল খবর অফিস: সিএন্ডবি রোড, বরিশাল

ইমেইল: nomanibsl@gmail.com

মোবাইল: 01713799669 / 01712596354

এই ওয়েবসাইটের কোনো লেখা, ছবি, অডিও, ভিডিও অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা বেআইনি

© বরিশাল খবর সর্বস্ব সংরক্ষিত

Developed by : BDIX ROOT