উপবিভাগীয় প্রকৌশলী (এসডিই) মাসুম বিল্লাহ। বর্তমানে কর্মরত শের-ই-বাংলা নগর ৩নং গণপূর্ত উপবিভাগের এসডিই হিসাবে। চাক্রিকে হাতিয়ার বানিয়ে পদ ও পদবী ব্যবহার করে বেনামী ঠিকাদারী ব্যবসাসহ ঘুষ দুর্নীতি আর পার্সেন্টেজ বাণিজ্যে তিনি ক্রমেই হয়ে উঠছেন অপ্রতিরোধ্য। বিতর্কিত মুক্তিযোদ্ধা সাটিফিকেটের বদৌলতে স্বৈরাচার লীগ সরকারের ফ্যাসিস্ট আওয়ামী নেতা আমির হোসেন আমুর আশ্রয়ে প্রশ্রয়ে চাকরিতে ঢুকে লোভনীয় পোষ্টিং পদোন্নতি নিয়ে বর্তমানে নামে-বেনামে কমপক্ষে ২০ কোটি টাকার সহায়-সম্পদের মালিক হয়েছেন তিনি। তথ্য সংশ্লিষ্ট নির্ভরযোগ্য সূত্রের।
অভিযোগে জানা যায়, প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ ঝালকাঠি জেলার রাজাপুর উপজেলার
শুক্তাগর ইউনিয়নের কাঠিরপাড়া গ্রামের স্থায়ী নিবাসী। তার পিতা ইউনুস আলী
ছিলেন ইউনিয়ন আ’লীগের সদস্য। মাসুম বিল্লাহ বুয়েটে পড়ার সময়ে ছাত্রলীগের
রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত ছিলেন। সেই সুবাদে ঝালকাঠি জেলা ছাত্রলীগের সভাপতির
হাত ধরে দুর্নীতির বরপুত্র দক্ষিণাঞ্চলে ফ্যাসিবাদের জনক সাবেক মন্ত্রী
আমির হোসেন আমুর আশীর্বাদে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় (যদিও একাধিক অভিযোগ মাসুম
বিল্লার বাবার একজন ভূয়া মুক্তিযোদ্ধা) গণপূর্তের সহকারী প্রকৌশলী পদে
চাকরি বাগিয়ে নেন।
পরবর্তীতে ওই আ’লীগ নেতার আশীর্বাদে একের পর এক লোভনীয় পোষ্টিংসহ পেয়ে যান
পদোন্নতি। ওই সময়ে রাজাপুরের কাঠিরপাড়া গ্রামে তাদের একটি ভাঙ্গা টিনের ঘর
ছিল। কিন্তু গণপূর্ত অধিদপ্তরের প্রকৌশলী হওয়ার পরে হাতে পেয়ে যান
আরব্যরজনীর আলাদ্দিনের চেরাগ। লীগের বদৌলতে আমুর আশীর্বাদে চাকরিকে হাতিয়ার
হিসেবে ব্যবহার করে ওই চেরাগ ঘষে ঘষে চাকরির সল্প সময়ে হয়ে উঠেন কোটিপতি।
স্টাফ অফিসার (সহকারী প্রকৌশলী) থাকাকালে আ’লীগের পছন্দের ঠিকাদারদের কাজ
পাইয়ে দিয়ে করতেন মোটা অংকের নগদ কমিশন বাণিজ্য। এসডিই হিসাবে পদোন্নতি
নিয়ে বিভিন্ন ভুয়া বিল ভাউচার, প্রকল্পে অনিয়ম ঘুষ দুর্নীতি করে কয়েক কোটি
টাকা অবৈধভাবে উপার্জন করেছেন তিনি।
অনুসন্ধানে আরো জানা যায়, ছাত্রলীগ ক্যাডার হিসাবে প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ
বিশেষ বিসিএসে মুক্তিযোদ্ধা কোটায় গণপূর্ত অধিদপ্তরের চাকরিতে ঢুকেন। ২০১৬
সালে তিনি নগর গণপূর্ত বিভাগের স্টাফ অফিসার। সেখানে টেন্ডার সম্পর্কিত
যাবতীয় কাজগুলো দেখ্শাুনা করতেন তিনি। সে সুবাদে গোপালগঞ্জের মাফিয়া
ঠিকাদার ছত্রলীগের আরেক ক্যাডার দীন ইসলামের এস এ এন্টারপ্রাইজসহ আ’লীগের
বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানকে জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কাজ পাইয়ে দিয়ে তিনি নগদ ১%
ক্ষেত্র বিশেষ ২% হিসাবে তিনটি অর্থবছরে প্রায় ২ কোটি টাকা কমিশন বাণিজ্য
করেছেন।
পরবর্তীতে আওয়ামী প্রভাব কাজে লাগিয়ে, অবৈধ অর্থের জোড়ে পদোন্নতি নিয়ে
এসডিই হিসাবে মিরপুর উপবিভাগ-২ এর দায়িত্ব নিয়ে সেখানে পাইকপাড়া
এপার্টমেন্টসহ বিভিন্ন প্রকল্পের কাজে এ্যাডভান্স বিল প্রদানের পাশাপাশি
বিবিধ জাল-জালিয়াতির মাধ্যমে কয়েক কোটি টাকা লোপাট করেন ঊদ্ধতনদের
যোগসাজশে। সেখানে প্রায় ৪ বছর থাকার পরে আমুর সুপারিশে ঢাকা থেকে ঢাকায়
শের-ই-বাংলা নগর ৩নং উপবিভাগে পোষ্টিং বাগিয়ে নিয়ে পরোক্ষ ঠিকাদারীসহ ঘুষ
বাণিজ্যে আরো অপ্রতিরোধ্য হয়ে উঠেন তিনি।
২৮ মার্চ ২০২৪ইং থেকে শুরু করে জুলাই বিপ্লবের পরে আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিদায়
নিলেও অবৈধ অর্থের জোড়ে প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ স্ব-মহিমায় বহালতবিয়তে আছেন
একই চেয়ারে। এ নিয়ে শোষিত বঞ্চিত কর্মকর্তা ও ঠিকাদারদের মধ্যে বিরাজ করছে
চাঁপা ক্ষোভ ও উত্তেজনা। এই ক্ষোভ ও উত্তেজনার সূত্র ধরে বঞ্চিত
প্রতারিতদের রোষাণলে পড়ে এই পূর্ত কর্মকর্তা যে কোন সময়ে লাঞ্চিত বা
রক্তাক্ত হলে এর দায়ভার বর্তমান গণপূর্ত প্রশাসনকে-ই নিতে হবে বলে
জানিয়েছেন নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক বৈষম্য বিরোধী প্রকৌশলী।
অপরদিকে, মাসুম বিল্লাহ কাস্টমস্ কর্মকর্তা বড় ভাই সফিউল বসর মিলে গ্রামের
ভাঙ্গা টিনের ঘর ভেঙে একটি ডুপ্লেক্স বাড়ি নির্মাণ করেছেন। বাবা মা স্ত্রী
বড় ভাইসহ বিভিন্ন আত্মীয়-স্বজনের নামে রাজাপুর উপজেলায় প্রায় ১০০ বিঘা জমি
ক্রয় করেছেন এই প্রকৌশলী। রাজধানী ঢাকা উত্তরা বনশ্রী সাভারসহ বিভিন্ন
জায়গায় করেছেন একাধিক ফ্লাট, নামে-বেনামে বিভিন্ন সম্পত্তি ক্রয় করেছেন।
দুর্নীতি দমন কমিশন দুদকে তার বিরুদ্ধে ইতেপূর্বে জমা হয়েছে একাধিক অভিযোগ।
সম্প্রতি দুদক তার ভূয়া মুক্তিযুদ্ধের সনদ ও অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে
মাসুম বিল্লাহ, তার বড় ভাই শফিউল বসর ও তার স্ত্রী নাইমা আক্তার সুমার
বিরুদ্ধে অনুসন্ধান শুরু করেছে ।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কাঠিরপাড়া গ্রামের বেশ কয়েকজন বাসিন্দা বলেন, বিগত
আ’লীগ আমলে এরা অবৈধভাবে প্রচুর অর্থ আয় করেছেন। স্থানীয় আ’লীগের ইউনিয়ন
উপজেলা ও সংসদ নির্বাচনে ব্যাপক অর্থ খরচ করতেন। তাদের বাসায় সব সময় বিপুল
পরিমাণ নগদ অর্থ ও স্বর্ণ মজুদ থাকতো। ২০২৪ সালের ৫ অক্টোবর তাদের নগদ
অর্থের সন্ধান পেয়ে ডাকাতরা অস্ত্রের মুখে বিপুল পরিমাণ অর্থ ও
স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। বেশ কয়েকজন গ্রামবাসী অভিযোগ করে বলেন
তাদের বাড়ি থেকে আনুমানিক ১৫-২০ কোটি টাকা ও কয়েকশো ভরি স্বর্ণ লুট হয়।
কিন্তু থানার এজাহারে মাসুম বিল্লাহ ও সফিউল বসর ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ উল্লেখ
করেছিলেন ১৩ ভরি সোনার গহনা, নগদ ৭ লাখ ৫৭ হাজার টাকা ও চারটি মোবাইল ফোন।
কারণ এতো বিশাল পরিমান অর্থ ও স্বর্ণের বৈধ হিসাব তাদের কাছে ছিল না। অবৈধ
অর্থ সম্পদ নিয়ে ধরা পড়ার ভয়ে তারা মিথ্যার আশ্রয় নেন। আরো বেশ কয়েকজন
বলেন, ৫ ই আগস্ট শেখ হাসিনার পতন হলে অনেক আ’লীগ নেতারা পালিয়ে যাওয়ার আগে
তাদের বাড়িতেও বিপুল পরিমাণ অর্থ রেখে গিয়েছিলেন।
এর আগেও তাদের বিরুদ্ধে দুর্নীতির ও ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার সনদের বিরুদ্ধে
বিভিন্ন অভিযোগ আসলেও অর্থ ও ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে তা অদৃশ্য করে দিতেন।
তার বাবা ইউনুস আলী ছিলেন একেবারেই হতদরিদ্র। সামান্য একটু কৃষি জমি ছাড়া
এদের তেমন কোন সম্পদ ছিল না। অথচ আ’লীগ ক্ষমতায় আসার পরে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধা
সেজে ছেলেদের সরকারি চাকরি পাইয়ে দিয়ে এখন নামে-বেনামে প্রায় অর্ধশত কোটি
টাকার মালিক হয়েছেন।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক গণপূর্তের বেশ কয়েকজন প্রকৌশলী ও খুলনা কাস্টমসের ও
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বলেন, প্রকৌশলী মাসুম বিল্লাহ ও কাস্টমস্ কর্মকর্তা
শফিউল বসর আমির হোসেন আমুর আত্মীয় হিসেবে নিজেদের পরিচয় দিতেন। সেই
প্রভাবের তাদের বিরুদ্ধে ভয়ে কেউ মুখ খুলতো না।