ঢাকার পল্লবী থানায় দায়ের হওয়া একটি প্রতারণা মামলার ভিত্তিতে পুলিশ ব্যুরো
অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) একটি বিশেষ অভিযানে
সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রের পাঁচ সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানে
প্রতারকদের কাছ থেকে নগদ ৭০ লাখ টাকা ও একটি গাড়ি উদ্ধার করা হয়।
গ্রেপ্তাররা
হলেন- মাহবুবুর রহমান ওরফে আশরাফুল ইসলাম বাবু (৪৩), আল আমিন ওরফে আ ন ম
রফিকুল ইসলাম (৫৫), রাশেদুল ইসলাম ওরফে আব্দুর রহমান ওরফে রফিকুল ইসলাম
রাকিব (৪৯), মাসুদ খান ওরফে বস মাসুদ (৪৩) ও বিলকিস।
এ সময় তাদের
কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় নগদ ৭০ লাখ, একটি মাইক্রোবাস, ২টি রাডো, ২টি
রোলেক্স ও ২টি ওমেগা ব্র্যান্ডের ঘড়ি, ২টি চেকবই, একটি সিল, একটি
চুক্তিপত্র ও ১২টি মোবাইল ফোন।
সোমবার (২৯ সেপ্টেম্বর) আগারগাঁওয়ের
পিবিআই ঢাকা মেট্রোর (উত্তর) কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা
জানান অতিরিক্ত ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান।
ঘটনার বর্ণনা দিয়ে
তিনি বলেন, ভুক্তভোগী মামলার বাদী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর
রহমান, যিনি একটি জাতীয় দৈনিক পত্রিকায় ব্রাদার্স গ্রুপ নামক কোম্পানির
চাকরির বিজ্ঞপ্তি দেখে প্রতারকদের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। চাকরির লোভ দেখিয়ে
এবং ব্যবসায়িক অংশীদারির মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে আসামিরা তাকে কলাবাগানের একটি
বাসায় ডেকে নেন। সেখানে তাকে একটি ‘ভাই ভাই’ পার্টনারশিপের নাটকীয়তা রচনা
করে পবিত্র কোরআন হাতে শপথ করানো হয়। এরপর ব্যবসায়িক প্রলোভনে ফেলে ২২ লাখ
টাকা হাতিয়ে নেয় প্রতারক চক্রটি।
পরে ব্যাংক কর্মকর্তা মিজানুর
জানতে পারেন, প্রতারকরা বাসা ছেড়ে পালিয়ে গেছে এবং তাদের ফোন বন্ধ। এমনকি
ফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তাকে প্রাণনাশের হুমকিও দেওয়া হয়। এরপর তিনি
থানায় মামলা করেন।
পিবিআইয়ের অভিযানে নাটকীয় মোড় তিনি
বলেন, মামলাটির তদন্ত নিয়ে পিবিআই ঢাকা মেট্রো (উত্তর) স্ব-উদ্যোগে বিশেষ
অভিযান শুরু করে। প্রথমে গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ৩০ জুন চক্রের অন্যতম
সদস্য আব্দুল আজিজসহ পাঁচ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযানের সময় অন্য এক
ভুক্তভোগী অবসরপ্রাপ্ত ব্যাংক কর্মকর্তা ইলিয়াস খানকেও একই কায়দায় প্রতারণা
করার সময় উদ্ধার করা হয় এবং তার নিকট থেকে নগদ ৭০ লাখ টাকা উদ্ধার করা হয়।
প্রতারকদের অভিনব কৌশল অতিরিক্ত
ডিআইজি মো. এনায়েত হোসেন মান্নান আরও বলেন, পিবিআইয়ের তদন্তে উঠে আসে,
চক্রটি দেশের বিভিন্ন স্থানে ঘন ঘন ঠিকানা পরিবর্তন করে নতুন নতুন অফিস কাম
বাসা ভাড়া নেয়। তারা নিজেদের বড় ব্যবসায়ী ও বিদেশি ক্রেতাদের প্রতিনিধি
হিসেবে পরিচয় দিয়ে চাকরির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে।
বিশেষভাবে সরকারি ও
ব্যাংক থেকে অবসরপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের টার্গেট করেন তারা। ভুক্তভোগীদের
হাইফাই পরিবেশে নিয়ে গিয়ে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের (রোলেক্স, রাডো, ওমেগা) ঘড়ির
আমদানি-রপ্তানি ব্যবসার গল্প শোনানো হয়। পরে বিশ্বাস অর্জনের জন্য
নাটকীয়ভাবে ভারতীয় ক্রেতা সেজে ৩ কোটি টাকার চেকও দেওয়া হয়।
পরিকল্পিতভাবে
ব্যবসায়িক অংশীদারির লোভ দেখিয়ে ভুক্তভোগীদের কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা
আদায় করে চক্রটি গা ঢাকা দেয়। এরপর ফোন ও সিম পরিবর্তন করে নতুন জায়গায়
একইভাবে প্রতারণা চালায়।
চক্রে নারী সদস্যের ভূমিকা তিনি
বলেন, চক্রের এক নারী সদস্য বিভিন্ন বাসা ভাড়া নেওয়া ও ভুক্তভোগীর সঙ্গে
সম্পর্ক গড়ার কাজে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। কখনো কাজের মেয়ে, আবার
কখনো বোন পরিচয়ে প্রতারকদের বিশ্বাসযোগ্যতা বাড়িয়ে তোলেন।
দেশজুড়ে প্রতারণার জাল তদন্তে
পিবিআই জানতে পেরেছে, চক্রটি গত তিন মাসে ৫০টিরও বেশি মোবাইল ফোন ও শতাধিক
সিম পরিবর্তন করেছে। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তাদের বিরুদ্ধে একাধিক
মামলা রয়েছে।
পিবিআই জানিয়েছে, এ ধরনের সংঘবদ্ধ প্রতারক চক্রকে
চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনতে তারা তৎপর। জনগণকে এ ধরনের প্রলোভনে পড়ে
বিনিয়োগ বা অর্থ প্রদান না করার জন্য সতর্কও করেছে সংস্থাটি।