চট্টগ্রামের কর্ণফুলীতে আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে গণসংযোগ করেছেন জামায়াতে ইসলামীর সংসদ সদস্য (এমপি) পদপ্রার্থী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী। এর আগে ওই ‘আওয়ামী লীগ নেতারই আয়োজন করা’ ভোজে অংশ নেন জামায়াত নেতা। ফ্যাসিস্ট ও গণহত্যাকারী দলের নেতাকে নিয়ে এই নির্বাচনী গণসংযোগের ঘটনায় স্থানীয় বিএনপি ও এনসিপির নেতাকর্মীদের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়লে রাজনৈতিকসহ বিভিন্ন মহলে নানা সমালোচনা শুরু হয়।
জানা গেছে, গত শুক্রবার বিকেলে উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের দৌলতপুর এলাকায় চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের জামায়াতের এমপি প্রার্থী ও দক্ষিণ জেলা জামায়াতের সাংগঠনিক সম্পাদক অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী ওই ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সায়েদ আল মাহমুদকে নিয়ে নির্বাচনী গণসংযোগ করেন। বিষয়টি সন্ধ্যায় জানাজানি হয়। একই সঙ্গে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ে গণসংযোগের ছবি। এতে এলাকায় ব্যাপক সমালোচনার সৃষ্টি হয়।
আওয়ামী লীগ নেতা সায়েদ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরুদ্ধে অবস্থান নেয়া, ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে জুলাই আন্দোলন ঘিরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিভিন্ন কটূক্তিমূলক লেখা শেয়ার করা, আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতা থাকাকালীন সময়ে অবাধ ক্ষমতা চর্চার অভিযোগ রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, আওয়ামী লীগ নেতা সায়েদ আল মাহমুদকে গ্রেপ্তার করতে সম্প্রতি কর্ণফুলী থানা পুলিশ অভিযান পরিচালনা করেন। এসময় প্রশাসনকে ম্যানেজ করে গ্রেপ্তার ঠেকান তার ভাতিজা স্থানীয় জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুন।
স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, গত শুক্রবার দুপুরে জামায়াত নেতা আব্দুল্লাহ আল মামুনের ঘরে ভোজে অংশ নেন জামায়াতের মনোনীত এমপি পদপ্রার্থী মাহমুদুল হাসান। মামুনের চাচা আওয়ামী লীগ নেতা সায়েদ আল মাহমুদ এই আয়োজন করেন। মূলত সায়েদ আল মাহমুদকে গ্রেপ্তার থেকে রক্ষা করতে এবং জামায়াতের সাথে সম্পর্ক মজবুত করতে এই আয়োজন করা হয়।
এছাড়া জামায়াতের সংসদ সদস্য প্রার্থী স্থানীয় মসজিদে নামাজ পড়া শেষে আবদুল আউয়াল চৌধুরী পাড়া, কাজী বাড়িসহ কয়েকটি পাড়ায় গণসংযোগ করেন বলেও নিশ্চিত করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
এবিষয়ে ক্ষোভ জানিয়ে কর্ণফুলী উপজেলা যুবদলের সিনিয়র যুগ্ম-আহ্বায়ক জাহেদুল ইসলাম শামীম বলেন, “জুলাই আন্দোলন নিয়ে প্রকাশ্যে কটূক্তিকারী আওয়ামী লীগের সভাপতিকে নিয়ে জামাতের প্রার্থী কীভাবে গণসংযোগ করেন? ক্ষমতার লোভে দীর্ঘদিনের রাজপথের সহযোগীদের এত অধঃপতন দেখাটা লজ্জাজনক।”
উপজেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম সম্পাদক প্রকৌশলী হারুনুর রশীদ বলেন, “জামায়াতে ইসলামী ভোটের রাজনীতিতে আওয়ামী লীগকে প্রাসঙ্গিক করে তুলছে, কৌশলে তারা এই কাজ দীর্ঘদিন ধরে করে যাচ্ছে। এসব কাজ জুলাই চেতনার পরিপন্থি বুঝেও নিজেদের শক্তিমত্তা বৃদ্ধিতে তারা এসব কাজ করছে।”
জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি) কর্ণফুলী উপজেলা শাখার পক্ষ থেকে এ বিষয়ে নিন্দা জানানো হয়েছে। সংগঠনের উপজেলার যুগ্ম সমন্বয়কারী ইমরান হোসেন বলেন, “স্বৈরাচার আওয়ামী লীগের পদধারী নেতার সঙ্গে জামায়াত প্রার্থীর এমন প্রকাশ্য সখ্যতা লজ্জাজনক ও রাজনৈতিক অনৈতিকতার চরম উদাহরণ। ছাত্রজনতার রক্ত ঘামে অর্জিত গণতন্ত্রকে এভাবে কলুষিত করা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়।”
আওয়ামী লীগ নেতাকে নিয়ে গণসংযোগের বিষয়টি অস্বীকার করেননি জামায়াতে ইসলামী কর্ণফুলী শাখার আমীর মনির আবছার চৌধুরীও। তিনি গণমাধ্যমকে বলেন, “স্থানীয় অনেকের সাথে মাহমুদও আমাদের সাথে এসেছিল। আমরা তো কাউকে আসতে নিষেধ করতে পারি না।”
এ বিষয়ে বড়উঠান ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি সায়েদ আল মাহমুদ বলেন, মসজিদে যাওয়ার সময় জামায়াতের সংসদ প্রার্থীর সাথে দেখা হয়। গণসংযোগ বা অন্যকিছুতে আমি ছিলাম না।
চট্টগ্রাম-১৩ (আনোয়ারা-কর্ণফুলী) আসনের এমপি প্রার্থী অধ্যাপক মাহমুদুল হাসান চৌধুরী বলেন, “বড়উঠান এলাকায় একটি মসজিদে নামাজ পড়াতে গিয়েছিলাম। নামাজ শেষে একজনের বাড়িতে দাওয়াত গ্রহণ করি। তখন স্থানীয়দের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ হয়। এটা নির্বাচনী গণসংযোগ ছিল না। ওই আওয়ামী লীগ নেতাকেও চিনতাম না।”