প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 12, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 9, 2025 ইং
এনসিপি নেতার মব সন্ত্রাস রেড ক্রিসেন্ট সদর দফতরে

বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি একটি আন্তর্জাতিক সেবামূলক সংস্থা। কিন্তু
বিগত আওয়ামী ফ্যাসিস্ট ও লুটেরা সরকারের আমলে প্রতিষ্ঠানটির দায়িত্বে থাকা
পরিচালনা বোর্ড ব্যাপকহারে অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ে। প্রতিষ্ঠানটির
অভ্যন্তরীণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরাও অনেকে এই দুর্নীতির চক্রে যোগ দেয়।
হাতিয়ে নেওয়া হয় কোটি কোটি। যে কারণে প্রতিষ্ঠানটি কাঙ্খিত সেবা দিতে
পারেনি। আওয়ামী সরকারের সেই দুর্নীতির ছায়া এখনও প্রতিষ্ঠানটিতে রয়ে গেছে
অনেকটাই। এই চক্রটি বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও রেড ক্রিসেন্ট
সোসাইটির স্বাভাবিক কার্যক্রমে মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করছে। এমনকি কোনো
কোনো সময় দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তারা নিজেদের অবৈধ প্রভাব টিকিয়ে রাখার জন্য
বাইরের রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও সন্ত্রাসীদের ভাড়া করে এনে মব সন্ত্রাসেরও
জন্ম দিচ্ছে।
এ রকমেরই একটি মব সন্ত্রাস হয়েছে ৮ অক্টোবর বুধবার
দুপুরে। এতে নেতৃত্ব দিয়েছেন সোসাইটির আপাদমস্তক দুর্নীতিবাজ পরিচালক ইমাম
জাফর শিকদার, যিনি অতীতে আওয়ামী লীগের বিভিন্ন নেতাদের সাথে হাত মিলিয়ে
সোসাইটিতে টেন্ডারবাজি, নিয়োগ বাণিজ্য ও বদলি বাণিজ্য করে এবং যুব ও
সহশিক্ষা কার্যক্রম থেকে অবৈধভাবে লাখ লাখ টাকা লোপাটসহ নানা
অনিয়ম-দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন।
জানা গেছে, ইমাম জাফর শিকদার
স্বৈরাচার আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য আমির
হোসেন আমুর ছোট ভাই পরিচয়ে প্রভাব খাটিয়ে নানা অনিয়ম-অপকর্মের মাধ্যমে এই
প্রতিষ্ঠানের কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তার সেইসব দুর্নীতির তদন্ত
চলছে বর্তমানে দুর্নীতি দমন কমিশনের পক্ষ থেকে। এ ব্যাপারে দুদক তদন্ত
কর্মকর্তাও নিয়োগ করেছে। দুর্নীতির দায়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে
তাকে ঢাকা থেকে সম্প্রতি চট্টগ্রাম জেমিসন হাসপাতালে শাস্তিমূলক বদলি করা
হয়েছে। ফলশ্রুতিতে ইমাম জাফর অত্যন্ত ক্ষুব্ধ হন। সোসাইটির বর্তমান
ট্রেজারার, যিনি সিলেটের আরেকজন দুর্নীতিবাজ হিসেবে খ্যাত আওয়ামী সরকারের
সিলেটের প্রাক্তন মেয়র বদরুদ্দীন কামরানের ছোট ভাই এবং ঘনিষ্ঠজন পরিচয়ে
দুর্নীতি করা আমিনুল ইসলাম এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির অবৈধ নিয়োগপ্রাপ্ত
উপ-পরিচালক এনসিপি নেতা মুনতাসির মাহমুদের সাথে হাত মিলিয়ে বুধবার দুপুরে
বহিরাগত সন্ত্রাসী এনে বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির জাতীয় সদর দপ্তরের
ভেতরে অরাজকতা ও মব তৈরি করছেন। বাংলাদেশ রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটি
আর্তমানবতার সেবায় নিয়োজিত একটি আন্তর্জাতিক প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানে
প্রতিদিন আন্তর্জাতিক রেড ক্রস, রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির ২০/২৫ জন বিদেশি
ডেলিগেট অফিস করেন। এই মব দেখে বহিরাগত সকল ডেলিগেটের মনে আতঙ্ক ও ভীতির
জন্ম নিয়েছে।
ঘটনার শুরুতে অফিসের নিয়ম অনুযায়ী বহিরাগতরা তথা মব
সৃষ্টিকারীরা উপযুক্ত কারণ দেখাতে অসমর্থ হওয়ায় তাদেরকে অফিসের ভিতরে ঢুকতে
না দিলে এনসিপি নেতা মুনতাসির নিজে এসে সিকিউরিটিদের হুমকি-ধমিক দিয়ে মব
সৃষ্টিকারীদের অফিসের ভিতরে প্রবেশ করান। তারা অফিসের ভিতরে যেয়ে
চেয়ারম্যান সচিবালয়, মহাসচিবের দপ্তরসহ বিভিন্ন দপ্তরে মব তৈরি করেন। এমন
ন্যাক্কারজনক ঘটনায় বিদেশিরা অনিরাপত্তা বোধ করলে হাতিরঝিল থানাকে অবহিত
করা হয়। সোসাইটির ট্রেজারার মো. আমিনুল ইসলাম, দুর্নীতিবাজ পরিচালক ইমাম
জাফর শিকদার এবং উপ-পরিচালক মুনতাসির মাহমুদের এসব অপকর্মের কারণে
আন্তর্জাতিক ও অরাজনৈতিক এই প্রতিষ্ঠানটি তার ঐতিহ্য ও ইমেজ হারাচ্ছে,
বলছেন রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাধারণ কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
খোঁজ
নিয়ে জানা গেছে, বহিরাগতরা সবাই মুনতাসির মাহমুদ এবং ইমাম জাফর শিকদারের
লোক। এই এনসিপি নেতা মুনতাসির মাহমুদ আরেক দুর্নীতিবাজ সমন্বয়ক, রেড
ক্রিসেন্ট সোসাইটির সাবেক বোর্ড সদস্য তুহিন ফারাবির ঘনিষ্ট বন্ধু। তুহিন
ফারাবীর মাধ্যমে যুব ও স্বেচ্ছাসেবক বিভাগের সাবেক পরিচালক ইমাম জাফর
শিকদারকে ঘুষ দিয়ে সম্পূর্ণ অবৈধভাবে রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিতে উপ-পরিচালক
পদে নিয়োগপ্রাপ্ত হন মুনতাসির মাহমুদ। কোনো রকমের নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই এক
বছরের চুক্তিতে তাকে এই নিয়োগ দেওয়া হয়। মাসিক বেতন ধরা হয় আশি হাজার টাকা।
কিন্তু
মুনতাসির মাহমুদ কখনও অফিসের নিয়ম-কানুন মানেন না। ইচ্ছা হলেই অফিসে এসে
উত্তেজনা তৈরি করে আবার চলে যান। অফিসের নিয়মানুযায়ী কোন কাজও করেন না।
মুনতাসির প্রতিদিনই বহিরাগতদের সোসাইটির ভেতরে এনে বিভিন্ন সন্ত্রাসী
কর্মকাণ্ড পরিচালনা করছেন। এগুলো সোসাইটির সিসিটিভি ক্যামেরায় ধারণ করা
আছে। রেড ক্রিসেন্টের উপ-পরিচালক মুনতাসির যেভাবে রাজনৈতিক পরিচয় ব্যবহার
করে জোরপূর্বক রেড ক্রিসেন্টে সোসাইটিতে চাকরি নিয়েছেন ঠিক তেমনই বর্তমান
সময়ে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের নিয়ে প্রতিদিন মহড়া দিচ্ছেন এবং জোরেশোরে ঘোষণা
করছেন তিনি তেজগাঁ এলাকা, হাতিরঝিল এলাকা থেকে এমপি পদে নির্বাচন করবেন।
রেড
ক্রিসেন্টের মত একটি অরাজনৈতিক প্রতিষ্ঠানে থেকে এ ধরনের কাজ অতীতে কেউ
কখনো করেনি। এ ধরনের মব তৈরির কারণে বিভিন্ন দেশের কাছে বাংলাদেশের
ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে। বিদেশি ডেলিগেটরাসহ অন্যান্য
কর্মকর্তা-কর্মচারীরা এখনো আতঙ্কে আছেন। প্রতিষ্ঠানের স্বাভাবিক কার্যক্রম
ব্যাহত হচ্ছে। এ বিষয়ে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা, বিশেষ সহকারী,
সচিব ও রেড ক্রিসেন্টের চেয়ারম্যানের আইনানুগ পদক্ষেপ কামনা করেছেন সাধারণ
কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা।
© বরিশাল খবর সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত