প্রিন্ট এর তারিখঃ Oct 12, 2025 ইং || প্রকাশের তারিখঃ Oct 11, 2025 ইং
কুমিল্লা-ফরিদপুর নামেই হচ্ছে দুই বিভাগ

ফরিদপুর ও কুমিল্লা নামেই নতুন দুটি প্রশাসনিক বিভাগ প্রতিষ্ঠার পথে
এগোচ্ছে অন্তর্বতী সরকার। সেইসঙ্গে নতুন দুটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্তও
হয়েছে।
সূত্র জানিয়েছে, আগামী মাসে প্রশাসনিক
পুনর্বিন্যাস-সংক্রান্ত জাতীয় বাস্তবায়ন কমিটির (নিকার) বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে
পারে এবং সেখানেই এ বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে। তবে কবে নাগাদ বৈঠক হতে
পারে তা জানা যায়নি।
সূত্রমতে, জাতিসংঘ সাধারণ অধিবেশন শেষে প্রধান উপদেষ্টা দেশে ফেরার পর অক্টোবরের প্রথম সপ্তাহে নিকার বৈঠক হতে পারে।
এর
আগে গত ৮ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিপরিষদ সচিব আব্দুর রশীদের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত
প্রি-নিকার বৈঠকে ফরিদপুর ও কুমিল্লা শহরের নামেই নতুন দুটি প্রশাসনিক
বিভাগ এবং নতুন দুটি উপজেলা গঠনের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত হয়।
জনপ্রশাসন
সংস্কার কমিশন ইতোমধ্যে ফরিদপুর, মাদারীপুর, রাজবাড়ী, গোপালগঞ্জ ও
শরীয়তপুর জেলা নিয়ে ফরিদপুর বিভাগ গঠন এবং কুমিল্লা বিভাগের জন্য
ব্রাহ্মণবাড়িয়া, কুমিল্লা, চাঁদপুর, ফেনী, লক্ষ্মীপুর ও নোয়াখালীর নাম
প্রস্তাব করেছে।
বর্তমানে মোট আটটি প্রশাসনিক বিভাগ আছে—ঢাকা,
চট্টগ্রাম, রাজশাহী, খুলনা, বরিশাল, সিলেট, রংপুর ও ময়মনসিংহ। এর মধ্যে
সর্বশেষ ২০১৫ সালে ময়মনসিংহকে বিভাগ হিসেবে উন্নীত করেছে সরকার।
এর পাশাপাশি কুমিল্লার মুরাদনগর ও চট্টগ্রামের ফটিকছড়ি উপজেলা ভেঙে নতুন দুটি উপজেলা গঠনের সিদ্ধান্ত হয়েছে।
মুরাদনগর
উপজেলার বাঙ্গরা থানাধীন ১০টি ইউনিয়ন নিয়ে 'বাঙ্গরা উপজেলা' এবং ফটিকছড়ি
ভেঙে 'ফটিকছড়ি উত্তর' নামে উপজেলা সৃষ্টির খসড়া প্রস্তাব চূড়ান্ত করেছে
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ।
বর্তমানে মুরাদনগর উপজেলার অধীনে মোট ২২টি ইউনিয়ন রয়েছে।
উল্লেখ্য,
২০২২ সালের ২৭ নভেম্বর তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে
অনুষ্ঠিত নিকার বৈঠকে বৃহত্তর ফরিদপুরের কয়েকটি জেলা নিয়ে 'পদ্মা বিভাগ'
এবং কুমিল্লা ও আশেপাশের জেলাগুলো নিয়ে 'মেঘনা বিভাগ' প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব
উঠলেও চূড়ান্ত অনুমোদন মেলেনি।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, অর্থনৈতিক সংকটের শঙ্কায় বিভাগ প্রতিষ্ঠার প্রস্তাব স্থগিত রাখা হয়েছিল।
বর্তমান পরিস্থিতিতেও নতুন বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে চলছে আলোচনা-সমালোচনা।
এক
সময় জেলা প্রশাসক এবং বিভাগীয় কমিশনারের দায়িত্ব পালন করেছেন, জনপ্রশাসন
মন্ত্রণালয় এবং মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সাবেক ও বর্তমান অন্তত চারজন
কর্মকর্তার সঙ্গে দ্য ডেইলি স্টারের কথা হয়েছে।
তারা মনে করেন,
তথ্য-প্রযুক্তি এবং যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশের
মতো ছোট দেশে নতুন প্রশাসনিক বিভাগের প্রয়োজনীয়তা নেই।
সচিবের
দায়িত্ব পালন শেষে বর্তমানে অবসরোত্তর ছুটিতে (পিআরএল) আছেন এমন এক
কর্মকর্তা গণমাধ্যমে বলেন, বিভাগীয় প্রশাসন থেকে সাধারণত জেলা-উপজেলা
পর্যায়ে তদারকি করা হয় এবং বিদ্যমান বিভাগগুলো থেকেই এটি যথাযথভাবে সম্ভব
হচ্ছে।
'নতুন বিভাগ প্রতিষ্ঠার কোনো যুক্তি নেই, শুধু শুধু জনগণের খরচ বাড়বে,' বলেন তিনি।
মন্ত্রিপরিষদ
বিভাগের এক যুগ্ম সচিবের মতে, প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অগ্রগতির
কারণে বিভাগীয় প্রশাসন না বাড়িয়ে বরং আরও ছোট করার সুযোগ আছে।
চারটি
বিভাগ করার পরামর্শ দিয়ে এই কর্মকর্তা আরও বলেন, বড় আকারে প্রশাসনিক
কার্যক্রম পরিচালনার মতো কাজ বিভাগগুলোতে নেই। শুধু শুধু হাজার হাজার কোটি
টাকা খরচের খাত তৈরি করার কোনো মানে হয় না!
সাবেক এক সচিব নাম
প্রকাশ না করার শর্তে গণমাধ্যমে বলেন, 'বিভাগ গঠিত হলে আমলাতান্ত্রিক কিছু
পদ সৃষ্টি হবে। আর জনগণের খরচের খাত বাড়বে। অন্যদিকে স্থানীয় রাজনীতিকরা
শহর প্রতিষ্ঠার নামে নতুন প্রকল্পের সুযোগ পাবেন। এসবে জনস্বার্থ নেই।'
'মন্ত্রিপরিষদ
বিভাগ এক ঘণ্টার নোটিশে ৬৪ জেলার ডিসিদের সঙ্গে অনলাইনে বৈঠকে করতে পারে,
ভিডিও কনফারেন্স করতে পারে। এই সময়ে বিভাগীয় প্রশাসন আরও বাড়ানো সম্পূর্ণ
অযৌক্তিক,' মত দেন তিনি।
© বরিশাল খবর সর্বস্বত্ব সংরক্ষিত